কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী
বাংলাদেশের জাতীয় কবি, কবি কাজী নজরুল ইসলাম। রবীন্দ্রনাথের পরে তিনি ছিলেন অবিভিক্ত বাংলার শ্রেষ্ঠ বাঙালি সাহিত্যিক। তিনি ছিলেন একাধারে শতাব্দী খ্যাত বিপ্লবী, যিনি সাহিত্যের মাধ্যমে গড়ে তুলেছিলেন বিদ্রোহ। বাংলা সাহিত্যে তাঁকে বলা হয় বিদ্রোহী কবি। কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে ২৪শে মে (১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দে) ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ছিলেন কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন এর ষষ্ঠ সন্তান। চার পুত্রের অকালে মৃত্যুর পর তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা পেশায় মসজিদ এর ইমাম ও মাজারের খাদেম ছিলেন এবং মা ছিলেন গৃহবধূ। জিবনের প্রথম প্রহরে তিনি সীমাহীন দুঃখের সম্মুখীন হওায় গ্রাম বাসী তাঁর ডাক নাম দেন ‘দুখু মিয়া’। কাজী নজরুল ইসলামের শিক্ষা জীবন ধর্মীয় শিক্ষা দিয়েই শিক্ষা জীবন শুরু হয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর। নিম্ন প্রাথমিক শিক্ষা স্থানীয় মক্তব থেকেই নেন তিনি। মাত্র ৮ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে পরিবারের ভরণ পোষণ এর দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নেন এবং কাজে নিয়োজিত হন। পারিবারিক অভাব অনটন এ পড়াশোনা বাধাগ্রস্থ হলেও তিনি শিক্ষা জীবনের ইতি টানেন নি। ১৯১০ সালে তিনি আবার ছাত্র জীবনে ফিরে যান। ভর্তি হন রানীগঞ্জ সিয়ারসোল রাজ স্কুল এ। পরবর্তীতে তিনি মাথরুন ইংরেজি স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে দায়িত্ব আর্থিক সংকট যেন বার বার দরজায় কড়া নাড়ে। ষষ্ঠ শ্রেণির পর আবার পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে কিশোর নজরুলের। ছোট খাটো চায়ের দোকানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে থাকেন তিনি। এ সময় এক দারোগা এর সান্নিধ্যে আবার পড়াশোনার সুযোগ পান তিনি। দারোগা কিশোর নজরুল কে সপ্তম শ্রেণি তে ভর্তি করিয়ে দেন। পরের বছর তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন এবং ৮ম শ্রেনিতে রানীগঞ্জ সিয়ারসোল রাজ স্কুল এ ভর্তি হন। এবং সেখানেই ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। পড়াশোনার পাক চুকাতে না চুকাতেই ভর্তি হন বাঙালি পল্টনে। কাজী নজরুল ইসলামের কর্ম জীবন মাত্র ১০ বছর বয়স থেকে পরিবারের হাল ধরেন তিনি। পরিবারের হাল ধরতে বাবার জায়গায় কাজ শুরু করেন। কাজ করেন পালোয়ান মাজারের সেবক ও মুয়াজ্জিন হিসেবে। কখনো কখনো মাংস বা চা রুটির দোকানে কাজ করেন তিনি। মাত্র কয়েক টাকা বেতনে চাকরি করতেন তিনি। পরবর্তীতে যে মক্তবে তিনি পড়াশোনা করেছিলেন ঐ মক্তবেই শিক্ষকতা করেন । শিক্ষকতায় তিনি বেশি দিন থাকেন নি।চলে গেলেন লেটর দলে। তার চাচা ছিলেন বিখ্যাত লেটো গানের দলের ওস্তাদ। তিনি মিশ্র গানের রচনা করতেন। তাঁর প্রভাবেই নজরুল নিয়মিত গানের আসরে আসতেন এবং পরবর্তীতে লেটোর দলে যোগ দেন তিনি। পরবর্তীতে ১০ম শ্রেণিতে থাকা কালে তিনি বাঙালি পলটনের হয়ে ১ম মহাযুদ্ধে যোগ দেন। দীর্ঘ আড়াই বছর(১৯১৭-১৯২০) সামরিক বাহিনীতে ছিলেন। এ সময় তিনি সাধারণ সৈনিক হতে ব্যাটেলিয়ন কোয়ার্টার মাস্টার হাবিরদার পর্যন্ত পদন্নতি পান। পরবর্তীতে যুদ্ধ শেষ হলে তিনি সৈন্য দল হতে ছাটাই হন এবং তাঁর নিজ দেশ কলকাতায় ফিরে আসেন। দেশে ফিরে এসে তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেন। ১৯২০ সালেই নজরুল শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এর হাতে সাংবাদিকতার সুত্রপাত করেন। সাহিত্য চর্চা: সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি ছিল তাঁর বিশাল ঝোঁক। লেটোর দলের সাথে থেকেই নজরুল সাহিত্য চর্চা করেন। দলের সাথে তিনি বিভিন্ন স্থানে যেতেন গান করতেন, অভিনয় করতেন , গল্প কবিতা ইত্যাদি লিখতেন। কবি গানের আসরে নিয়মিত হয়ে উঠলেন নজরুল। একে একে পরিচিতি বাড়তে থাকে তাঁর। পাশাপাশি বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি অধ্যয়ন শুরু করেন। শুরু করেন হিন্দু ধর্মের পুরাণ কীর্তি সমূহও অধ্যয়ন। এরই সাথে রচনা করেন লোকসংগীত। সঙ্গীত এর জগতে তাকে বলা হত ‘ বুলবুল’। তবে তাঁকে অধিক সমাহিত করা হত ‘বিদ্রোহী কবি’ হিসেবে।(১৯১৭-১৯২০) ১ম মহা যুদ্ধের সময় নজরুল করাচিতে সেনা নিবাসে বসে ‘মুক্তি’ কবিতা রচনা করেন। যা পত্রিকায় প্রকাশের পর নতুন ধারার কবিতার সূচনা হয়। তাঁর উল্লেখ যোগ্য কবিতা হলঃ অগ্নিবীণা, সাম্যবাদী , ঝিঙে ফুল, চক্রবাক ইত্যাদি। এ সময় তিনি সহ সৈনিকদের সাথে সাহিত্যানুরাগী হয়ে উঠেন এবং গদ্য পদ্য রচনা করেন। এমনকি তিনি সে সময় সাময়িক পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। তাঁর লেখায় ছিল ভিন্ন ধর্মী ভাব। যেখানে তৎকালীন সময়ে সকলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে অনুকরণ করতেন, সেখানে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর লেখায় ছিল বিদ্রোহের বহ্নি, খেটে খাওয়া মানুষের অধিকারের কথা, গরীব দুঃখীদের হকের কথা, সর্বস্তরের মানুষের আনাগোনা ছিল তাঁর কবিতায়। এতেই তিনি ক্ষান্ত নন, তিনি ছিলেন নতুন ধারার কবি। তাঁর কাছে ছিল হিন্দি, উর্দু, আরবি, ফারসি ইত্যাদি শব্দের শব্দ ভাণ্ডার। গল্প গানেও ছিল তাঁর আনাগোনা। আরবি, ফারসি গজলেও ছিল তাঁর দক্ষতা। যা তাঁকে আলাদা পরিচিতি দেয়
Comments